রসুন ও কালো জিরার উপকারিতা | রসুন ও কালো জিরার যত গুনাগুন

 আপনি যদি রসুন ও কালো জিরার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই পোষ্টটি আপনার জন্য। এই পোষ্টটি মাধ্যমে জানতে পারবেন রসুন কি? রসুনের উপকারিতা, রসুন খাওয়ার নিয়ম, কালো জিরা কি? কালো জিরার উপকারিতা, কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা, কালে জিরা খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি। 

রসুন ও কালো জিরার উপকারিতা | রসুন ও কালো জিরার যত গুনাগুন
রসুন ও কালো জিরার উপকারিতা |

রসুন কি?

রসুন রান্নার কাজে একটি পরিচিতি জিনিস। রসুন আমরা প্রায় সব ধরনের রান্নায় ব্যবহার করে থাকি, এটি রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। কিন্তু এর উপকার সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। রসুন রান্না ছাড়াও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভেষজ উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। রসুন (Allium Sativum) হলো একপ্রকার ঝাঝালো স্বাদের উদ্ভিদ এবং লিলি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এর বহু লবঙ্গ থাকে যার কারনে কাগজের মত খোসার মধ্যে থাকে।

রসুনের উপকারিতা 

১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

২) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে : রসুন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। 

৩) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় : রসুন খারাপ কোলেস্টরেলের মাত্রা কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। 

৪) হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : রসুন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। 

৫) ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে : রসুনে থাকা এন্টি ক্যান্সার উপাদান কিছু ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। 

৬) জ্বর ও ঠান্ডা কমাতে সাহায্য করে: রসুন জ্বর ঠান্ডা নিরাময় কাজ করে।

৭) পেটের সমস্যার সমাধানে কাজ করে : রসুন পেটে বিভিন্ন সমস্যা যেমন গ্যাস অম্বল ও ডায়রিয়া সমাধানে কাজ করে।

➡️ আরো পড়ুন : অলিভ অয়েল এর উপকারিতা । অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম

রসুন খাওয়ার নিয়ম 

🔰 খাওয়ার পরিমাণ :

  • সাধারণত: প্রতিদিন ১-২ কোয়া রসুন খাওয়া যথেষ্ট। যৌন সমস্যা সমাধানে আপনি তিন বেলা ০৩ কোয়া রসুন খান।
  • চিকিৎসার জন্য: কোন নির্দিষ্ট রোগের জন্য রসুন ব্যবহার করলে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণ গ্রহণ করুন।

🔰 রসুন খাওয়ার সময় :

  • খালি পেটে: রসুনের সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে হলে সকালে খালি পেটে খেলে ভালো। সকালে খালি পেটে রসুন খেলে এর ফল পাওয়া যায়।
  • রান্নার সাথে: রান্নার সাথে রসুন ব্যবহার করলেও এর পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। অথবা আপনি সিদ্ধ করে খেতে পারেন।
🔰রসুন কিভাবে খাবেন :

  • কাঁচা: কাঁচা রসুনে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ থাকে।
  • ভাজা: ভেজে খেলে রসুনের স্বাদ ও গন্ধ কম হয়।
  • গুঁড়ো: রসুনের গুঁড়ো করে খেতে পারেন।
  • মধু মিশিয়ে: ঝাঁঝালো স্বাদের জন্য মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। মধু মিশিয়ে খেলে ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়।

🔰 রসুন খাওয়ার সাবধানতা

  • গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলারা: যে সকল মহিলারা গর্ভবতী স্তন্যদানকারী তারা রসুন খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  • অ্যালার্জি: যাদের শরীরে এলার্জি আছে তারা রসুন খাবেন না। কারন রসুনে এলার্জি থাকে।
  • রক্তপাতের ঝুঁকি: রক্তপাতের ঝুঁকি থাকলে রসুন খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কালোজিরা কি?

কালোজিরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। কালোজিরা যা Nigella sativa নামে পরিচিত একি ফুলের বীজ যা ঔষধি গুনে সমৃদ্ধ। কালোজিরা কে মহা ঔষধ বলা হয় অর্থাৎ সব ধরনের রোগের ঔষধ বলা হয়। প্রাচীন কাল থেকে কালোজিরা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিশোধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।  কালোজিরা আমরা রান্না থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। সুস্থ থাকতে আমাদের কালোজিরা খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কালোজিরা খেলে শরীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সতেজ হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

কালোজিরার উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: কালোজিরায় আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

হজম উন্নত করে: কালোজিরা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, পেট ফাঁপা, অম্বল এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

মধুমেহ নিয়ন্ত্রণে রাখে: কালোজিরা রক্তে শরকরার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: কালোজিরা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে: কালোজিরায় আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।

চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে: কালোজিরা চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং চুল পড়া রোধ করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে: কালোজিরা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ব্রণ ও দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

 কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম 

🔰 খাওয়ার পরিমাণ :

  • একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন ১-২ চা চামচ (৫-১০ গ্রাম) কালোজিরা খাওয়া ভালো।
  • শিশুদের জন্য পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া উচিত।
  • ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য কালোজিরা খাওয়ানোর আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

🔰 খাবার সময়:

  • সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়া সবচেয়ে ভালো।
  • আপনি এটি দুধ, মধু, বা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • রুটি, ভাত, বা অন্য খাবারের সাথেও কালোজিরা খেতে পারেন।
  • রাতে ঘুমানোর আগে কালোজিরা খাওয়া কিছু লোকের জন্য ওষুধের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। 

🔰 কিভাবে খাবেন :

  • কালোজিরা তেল বানিয়ে খেতে পারবেন।
  • কালোজিরা ভেজে খেতে পারবেন।
  • কালোজিরা গুঁড়ো করে খেতে পারবেন।
  • কালোজিরা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ঐ পানি খেতে পারবেন।

কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

কালোজিরা যা কালো তিল নামে পরিচিত। অসাধারণ ঔষধি গুণাবলীর জন্য বহু সময় ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

👉 ১) হজমশক্তি উন্নত করে: কালোজিরাতে থাকা থাইমোকুইনোন নামক উপাদান হজম রস নিঃসরণ বৃদ্ধি করে হজমশক্তি উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পেট ফাঁপা ও পেট ব্যথার সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।

👉 ২) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: কালোজিরায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। 

👉 ৩) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: কালোজিরা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা থাইমোকুইনোন রক্তনালী প্রসারিত করে রক্তচাপ কমাতে পারে।

👉 ৪) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: কালোজিরা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা নিগেলিন নামক উপাদান ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

👉৫) ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে: কালোজিরায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। এতে থাকা থাইমোকুইনোন ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

👉 ৬) ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী: কালোজিরা ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। এছাড়াও, কালোজিরা চুল পড়া রোধ করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

👉 ৭) যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে: কালোজিরা পুরুষ ও মহিলা উভয়ের যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে থাকা থাইমোকুইনোন ও নিগেলিন যৌন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে যৌন আকাঙ্ক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার নিয়ম

  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ চা চামচ কালোজিরা চিবিয়ে খেতে পারেন।
  • অথবা ০১ গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ কালোজিরা ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পানি ও কালোজিরা একসাথে খেতে পারেন।
  • মধুর সাথে মিশিয়েও কালোজিরা খাওয়া পারে।

উপসংহার 

তাহলে উপরোক্ত বিষয় গুলোর মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, রসুন এবং কালো জিরা রান্নার কাজে এবং স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাদান। এই দুইটি উপাদান আমরা রান্নার কাজে ব্যবহার করছি এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য খাচ্ছি। আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে তাহলে মন্তব্য এবং শেয়ার করতে ভুলবেন না।  

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url