ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা কি?

আপনি যদি ড্রাগন ফল সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই পোষ্ট আপনার কাজে দিবে। এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা, ড্রাগন ফলের উপকারিতা, ড্রাগন ফলের অপকারিতা, ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম, ড্রাগন ফলের বৈশিষ্ট্যড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা, ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ড্রাগন ফল খাওয়ার টিপস ইত্যাদি সম্পর্কে।

ভুমিকা

ড্রাগন নামটি শুনলে আমাদের প্রথমেই মনে হয় ড্রাগন প্রাণীর কথা। কিন্তু এই ড্রাগন হলো মুলত ফল। ড্রাগন ফল, যা পিতায়া নামেও পরিচিত, ড্রাগন একধরনের ফণীমনসা (ক্যাকটাস) প্রজাতির ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Hylocereus undatus। এই ফলটির বাইরের অংশ উজ্জ্বল গোলাপি বা হলুদ রঙের এবং এর উপরে সবুজ রঙের আঁশযুক্ত ডানার মতো অংশ থাকে। ভেতরে সাদা বা লাল রঙের মিষ্টি এবং রসালো শাঁস থাকে এবং কালো বীজ থাকে। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা |

ড্রাগন ফলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:

উৎপত্তি: মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা।

চাষ: বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইসরায়েল, ইত্যাদি দেশে ড্রাগন ফল চাষ করা হয়।

পুষ্টিগুণ: ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

স্বাস্থ্য উপকারিতা: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হজম উন্নত করা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ত্বকের যত্ন, চুলের স্বাস্থ্য, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষা।

ব্যবহার: কাঁচা ফল হিসেবে, সালাদে, জুস, স্মুদি, আইসক্রিম, মিষ্টান্ন, ইত্যাদি।

ড্রাগন ফল সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য:

ড্রাগন ফল বিভিন্ন রঙের হতে পারে, যেমন লাল, সাদা, হলুদ, এবং গোলাপি। এটি "ক্যাকটাস ফিগ" বা "পিতায়া" নামেও পরিচিত। ড্রাগন ফলের স্বাদ কিছুটা মিষ্টি এবং কিউই ফলের মত। ড্রাগন ফল বাজারে সহজলভ্য এবং দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।

ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম:

ড্রাগন ফল কিনলে খোসা নরম এবং উজ্জ্বল রঙের হওয়া উচিত। ফলটি ধুয়ে ছুরি দিয়ে মাঝখান দিয়ে কেটে দুই ভাগ করে খেতে পারেন। চামচ দিয়ে শাঁস বের করে খেতে পারেন অথবা সালাদে, জুস, স্মুদি, ইত্যাদির সাথে মিথিয়ে খেতে  পারেন।

আরো পড়ুন : ➡️মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা | মেথির ক্ষতিকারক দিক

➡️পাথর কুচি পাতার উপকারিতা ২০২৪ | পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক

➡️রসুন ও কালো জিরার উপকারিতা | রসুন ও কালো জিরার যত গুনাগুন

কখন খাবেন:

  • ড্রাগন ফল সারা বছর খাওয়া যায়, তবে গ্রীষ্মকালে এটি বেশি পাওয়া যায়।
  • খাবারের আগে বা পরে ড্রাগন ফল খাওয়া যেতে পারে।
  • এটি হালকা খাবার হিসেবেও খাওয়া যায়।

কীভাবে খাবেন:

ড্রাগন ফল খাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হল ছুরি দিয়ে মাঝখান দিয়ে কেটে দুই ভাগ করে নেওয়া। এরপর চামচ দিয়ে বীজগুলো বের করে ফলের ভেতরের অংশ খেতে পারেন। বীজগুলো ফেলে না দিয়ে স্যালাডে মিশিয়ে খেতে পারেন। ড্রাগন ফল দিয়ে জুস, স্মুদি, আইসক্রিম, ডেজার্ট ইত্যাদিও বানানো যায়। প্রতিদিন ১-২ টি ড্রাগন ফল খাওয়া যেতে পারে

ড্রাগন ফলের উপকারিতা:

🔰রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

🔰হজম উন্নত করা: ড্রাগন ফলে থাকা ফাইবার হজম উন্নত করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: ড্রাগন ফলে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

🔰ত্বকের যত্ন: ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের যত্নের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকের বয়সের ছাপ ধীর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে।
চুলের স্বাস্থ্য: ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন এ এবং ই চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

🔰ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ড্রাগন ফল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

🔰হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষা: ড্রাগন ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 🔰ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী: ভিটামিন সি ও ই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। বয়সের ছাপ দূর করে। চুলের বৃদ্ধি ও পাতলা হওয়া রোধ করে।

🔰গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী: ফলিক অ্যাসিড গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী। গর্ভের সন্তান সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।

ড্রাগন ফলের অপকারিতা

  • অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
  • ঠান্ডা খেলে পেট খারাপ হতে পারে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের সাবধানে খাওয়া উচিত অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ড্রাগন ফল খাওয়ার কিছু টিপস

ড্রাগন ফল কিনলে খোসা নরম এবং উজ্জ্বল রঙের হওয়া উচিত। ফলটি ধুয়ে ছুরি দিয়ে মাঝখান দিয়ে কেটে দুই ভাগ করে খেতে পারেন। চামচ দিয়ে শাঁস বের করে খেতে পারেন অথবা সালাদে, জুস, স্মুদি, ইত্যাদির সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।

ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা 

ড্রাগন ফলের খোসা, যা অনেকেই ফেলে দেন, আসলে অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার এবং বিটাসায়ানিন থাকে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

ড্রাগন ফলের খোসার কিছু উপকারিতা:

🔰হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো: ড্রাগন ফলের খোসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃৎপিণ্ডের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, এতে থাকা ফাইবার রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

🔰ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে: ড্রাগন ফলের খোসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ও বিস্তার রোধে সহায়তা করে।

🔰রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: ড্রাগন ফলের খোসায় থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

🔰হজমশক্তি উন্নত করে: ড্রাগন ফলের খোসায় থাকা ফাইবার হজমশক্তি উন্নত করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

🔰চোখের জন্য ভালো: ড্রাগন ফলের খোসায় থাকা বিটা-ক্যারোটিন চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

🔰ত্বকের জন্য উপকারী: ড্রাগন ফলের খোসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।

ড্রাগন ফলের খোসা খাওয়ার উপায়:

  • ড্রাগন ফলের খোসা ভালো করে ধুয়ে পাতলা করে কেটে সালাদের সাথে খেতে পারেন।
  • ড্রাগন ফলের খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করে স্মুদি বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • ড্রাগন ফলের খোসা জারে করে মধুতে মিশিয়ে রাখতে পারেন। এটি একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর জ্যাম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

উপসংহার

পরিশেষে বলতে পারি ড্রাগন ফল একটি উপকারী ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং অন্যান্য উপাদান। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী । সুতরাং আমরা বলতেই পারি এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী ফল। আমাদের দেশে অনেক কৃষক এখন ড্রাগন ফল চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। দেশের জনগণের চাহিদা মেটাচ্ছেন সেই সাথে বিদেশি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন।


গুগল নিউজে সর্বপ্রথম আমাদের পোষ্ট পেতে এখানে ক্লিক করুন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url